“লাল আকাশের ডায়েরি”
গতকাল সন্ধ্যায় আকাশ ছিল একদম লালচে, যেন সূর্য তার শেষ আলোর ঝলক দিয়ে পৃথিবীকে এক নতুন রঙে রাঙিয়ে ফেলেছিল। সূর্য তখন ধীরে ধীরে অস্ত যাচ্ছিল এবং সেই মুহূর্তে আমি আর আমার বন্ধুরা একটি ফাঁকা জায়গায় আড্ডা দিতে গিয়েছিলাম। লালচে আকাশের সৌন্দর্য দেখে এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব হচ্ছিল, যেন সব কিছু থেমে গেছে, শুধুমাত্র সেই মুহূর্তটি উপভোগ করার জন্য।
ফোন বের করে সেই অমূল্য মুহূর্তগুলো ক্যামেরাবন্দী করলাম। আজকের ব্লগে আমি সেই লালচে আকাশের কিছু মনোমুগ্ধকর ছবি শেয়ার করব এবং সেই সূর্যাস্তের মুহূর্তের সৌন্দর্য নিয়ে কিছু কথা বলব। চলুন, শুরু করি আজকের ব্লগ...
সূর্য অস্ত যাচ্ছে,দিনের শেষ আলোর দীপ্তি যখন ধীরে ধীরে মিইয়ে আসে, তখন আকাশের রঙ বদলে যেতে শুরু করে। দুপুরের তেজি নীল কিংবা সকালের কোমল সোনালি ছাপ মুছে গিয়ে তার জায়গা নেয় এক মোহময় লালচে আভা। সেই মুহূর্তটাই যেন প্রকৃতির নিজস্ব ক্যানভাসে আঁকা এক নিঃশব্দ কবিতা। সন্ধ্যার ঠিক আগের এই সময়টাকে অনেকেই “গোল্ডেন আওয়ার” বলে, কিন্তু আমার কাছে এটা “লাল আকাশের ঘন্টা” যেখানে সময়ের গতি একটু যেন থমকে যায়। হঠাৎ করেই সবকিছু শান্ত হয়ে আসে। শহরের কোলাহল কিছুটা স্তিমিত হয়, গ্রামের মাঠে বাতাসের দোলা ধীরে ধীরে ঠাণ্ডা হয়ে ওঠে। গাছের পাতাগুলোও যেন সেই লাল আভায় নিজের ছায়া হারিয়ে ফেলে।
এই সময়টায় আকাশ এক অপূর্ব রঙে সেজে ওঠে কমলা, গেরুয়া আর লালের মিশেলে তৈরি হয় এক দুর্দান্ত সুর, যেটা শুধুই চোখে দেখা নয়, হৃদয়ে অনুভব করার ব্যাপার। এই মুহূর্তের সৌন্দর্য ধরা দেয় না হুট করে চোখ মেলে তাকালেই। একে উপভোগ করতে হয় নিঃশব্দে, মন দিয়ে, ধীরে ধীরে।আমার সবচেয়ে প্রিয় স্মৃতিগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর পেছনে এই লাল আকাশের সঙ্গ আছে। কখনো নিঃসঙ্গ হাঁটায়, কখনো বন্ধুদের সঙ্গে নদীর পাড়ে বসে, আবার কখনো প্রিয় মানুষের চোখে এই আকাশের প্রতিফলন খুঁজে পেয়েছি। কতশত কথা হয়নি বলা, কিন্তু সেই রঙিন আকাশ আমাদের হয়ে বলে দিয়েছে সবকিছু নীরব ভাষায়।
কখনো মনে হয়, এই মুহূর্তটা যেন একটা নিঃশেষ বিদায়ের প্রতীক। সূর্য যেমন ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায় দিগন্তের ওপারে, তেমনি আমাদের অনেক অনুভূতিও চুপিচুপি হারিয়ে যায় সময়ের গহ্বরে। কিন্তু এই অস্তমান সূর্যের মাঝেই একটা নতুন দিনের আশ্বাস লুকিয়ে থাকে। হয়তো এই কারণেই লাল আকাশ কেবল বিষাদের নয়, একধরনের প্রতীক্ষাও।ছোটবেলায় সন্ধ্যার সময় দাদার সঙ্গে পুকুরপাড়ে বসতাম। দাদা আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতেন, “দেখছিস, সূর্য মরে না, ঘুমায়। কাল আবার উঠবে, ঠিক আগের মতো।” সেই সময়ের সেই কথাগুলো আজও হৃদয়ে রয়ে গেছে। তখনও বুঝিনি, এই অস্তরাগ কেবল একটি দিনের পরিসমাপ্তি নয়, বরং জীবনের প্রতিটি বিদায়েরও এক রঙিন প্রতিচ্ছবি।
আধুনিক জীবনের ব্যস্ততায় আমরা অনেক কিছুই হারিয়ে ফেলি, হারিয়ে ফেলি আকাশের রঙ দেখার সময়টুকু। কিন্তু মাঝে মাঝে যখন হঠাৎ করে কোনো দিন শেষে বাড়ির ছাদে উঠে দেখি আকাশটা লাল হয়ে আছে, তখন মনটা হঠাৎ করেই থেমে যায়। কল্পনায় ভেসে আসে পুরনো দিনের দৃশ্য, হারিয়ে যাওয়া কথা, না বলা অনুভব।এই অস্তরাগ শুধু একটি দৃশ্য নয়, একধরনের আত্মসমর্পণ। নিজের আলো দিয়ে পুরো দিনকে আলোকিত করে সূর্য যেন বলে যায়, “আজকের জন্য এটাই যথেষ্ট, কাল আবার দেখা হবে।” লাল আকাশ তাই ক্লান্ত দিনের এক শান্ত সমাপ্তি, আর নতুন সকালের এক নীরব প্রতিশ্রুতি।
সেই প্রতিটি লাল আকাশ যেন আমাকে শিখিয়ে দেয় শেষ মানেই শেষ নয়, বরং নতুন কিছুর শুরু। প্রতিটি অস্তরাগ তাই একরকম ভালোবাসার নামান্তর, এক নিরব আশ্বাস, যে জীবন- যে আলো- চলেই যাচ্ছে, চলেই আসছে।আর আজকের ব্লগ এখানেই শেষ করছি।
প্রত্যেকটা ছবি তোলার লোকেশন এবং ডিভাইসের নামঃ
Device:Samsung A33 (5G)
আজ এখানেই শেষ করছি। অন্য কোন একদিন ভিন্ন ধরনের কনটেন্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হব। ততক্ষন পর্যন্ত আপনারা সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।
ফোনের বিবরণ
মোবাইল | Samsung A33 (5G) |
---|---|
ধরণ | "লাল আকাশের ডায়েরি" |
ক্যমেরা মডেল | A33 (48+8+5+2) |
ক্যাপচার | @mohamad786 |
অবস্থান | সিরাজগঞ্জ- বাংলাদেশ |