আজ গল্প করি দুর্যোধন ভার্যা ভানুমতী কে নিয়ে৷ শেষ পর্ব।

প্রিয় আমার বাংলা ব্লগের বন্ধুরা,


সমস্ত ভারতবাসী এবং বাংলাদেশের বাঙালি সহযাত্রীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।


received_1019128177082084.jpeg

[সোর্স](মেটা AI)








আশা করি আপনারা ঈশ্বরের কৃপায় সুস্থ আছেন, সব দিক থেকে ভালোও আছেন। আপনাদের সবার ভালো থাকা কামনা করে শুরু করছি আজকের ব্লগ।



কথা অনু্যায়ী ইচ্ছে অনুযায়ী কর্ণ ভানুমতীকে তুলে দিয়েছিলেন দুর্যোধনের হাতে৷ ভানুমতী প্রথমে অসন্তুষ্ট হলেও পরে উপায়হীন হয়ে দুর্যোধনের গলায় বরমাল্য পরাতে বাধ্য হন। এবং হস্তিনাপুর ফেরার পর দুর্যোধনের বাহুবলের কাছে ভানুমতী নিজেকে সঁপে দেয়। দুর্যোধন যখন ভীষ্মের পূর্ব কাহিনী বর্ণনা করে। বিচিত্রবীর্যের জন্য অম্বা, অম্বালিকাকে স্বয়ংবর থেকে জিতে ফেরে।ভানুমতীও নিজেকে দুর্যোধনের চরণদাসীতে পরিণত করে। পরবর্তীতে দেখা যায় ভানুমতী ও দুর্যোধনের যমজ সন্তান জন্ম নেয়, লক্ষণা আর লক্ষণ৷

দুর্যোধন খলনায়ক হলেও স্বামী হিসেবে ছিলেন অসাধারণ। স্ত্রীর প্রতি তাঁর প্রেম বিশ্বাস যত্নের কথা নিন্দুকেরাও ব্যাখ্যা করতে পারেননি। বিষয়টা সত্যিই অবাক করার মতো। ভানুমতী স্ত্রী হিসেবে হয়তো বুঝতেই পারতেন মামা শকুনির পরামর্শেই দুর্যোধন এতটা ধ্বংসের খেলায় মেতে উঠেছিল৷ না হলে যে মানুষ স্ত্রী ও বন্ধুর প্রতি এতো সদয় ও সহজ মনের সে কিভাবে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে? এই কথা কেন বলছি জানেন? ভানুমতী নিয়ে পড়তে গিয়ে এক আর্টিকেলে পড়লাম কর্ণের সাথে ভানুমতীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ভানুমতীর দাসীর সাথে কর্ণের বিয়ের কথা যা শান্তি পর্বে ঋষি নারদ বর্ণনা করেছিলেন।

ঘটনাটির বিবরণ দিতে গিয়ে বলা হয়েছে ভানুমতীর সঙ্গে কর্ণের সুসম্পর্ক হেতু একসঙ্গে পাশা খেলতেও দেখা গেছে। একদিন হঠাৎ পাশা খেলার সময় দুর্যোধন এসে উপস্থিত হয় এবং ভানুমতী দ্রুত উঠে দাঁড়ায়। বিষয়টি কর্ণের অগোচর হওয়ায় সে ভানুমতীকে হাত ধরেই খেলায় বসাতে চেষ্টা করে। এসময় মতির মালায় টান পড়ে ছিড়ে যায়। কিন্তু ভানুমতী ও কর্ণের প্রতি প্রবল বিশ্বাসের ফলে দুর্যোধন বিষয়টা নিয়ে ভাবারও চেষ্টা করেনি।

মহাভারতের কাহিনী নিয়ে বহুকথা প্রচলিত। এটি তারই একটি। কিন্তু এসব নিয়ে সঠিক তথ্যের যথেষ্ট ঘাটতি আছে। কারণ এমন একটি চরিত্রের স্ত্রীয়ের কথা কবি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বিশেষ ভাবে আলোকপাত করেননি। বলা যায় অনেকটাই উদাসীন। কিন্তু কেন? এমন একজন নিষ্ঠুর মানুষের স্ত্রী হবার পরে তার ভেতর কি হয়েছিল? কৌরব পান্ডবদের সাথে সম্পর্ক ঠিক রাখার জন্য কেনই বা কোন ভূমিকা পালন করেনি? তবে কি কুরুক্ষেত্রর যুদ্ধে পৌঁছোনোই প্রধান উদ্দেশ্য ছিল? কারণ যুদ্ধ শেষে ভানুমতী হারিয়েছেন তার পুত্র ও স্বামী দুজনকেই৷ তবে তার কষ্টের বর্ণনাও কি কোনভাবে দেওয়া যেত না? কিংবা তার পরিনতির কথা?

যেখানে গান্ধারী স্ত্রী পর্বে কৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে বলছেন- "দেখো, হে কৃষ্ণ, লক্ষ্মণের মা, সেই বৃহৎ নিতম্বের রমণী, তার প্রলেপ বিক্ষিপ্ত, দুর্যোধনের সেই প্রিয় পত্নী, সোনার যজ্ঞবেদির মতো। নিঃসন্দেহে, মহান বুদ্ধিমত্তার এই মেয়েটি, তার পরাক্রমশালী সশস্ত্র প্রভু পূর্বে জীবিত থাকাকালীন, তার প্রভুর সুদর্শন অস্ত্রের আলিঙ্গনে খেলাধুলা করত! কেন, সত্যিই, যুদ্ধে নিহত আমার ছেলে ও নাতিকে দেখে আমার এই হৃদয় একশ টুকরো হয়ে যায় না? হায়, সেই নির্দোষ ভদ্রমহিলা এখন গন্ধ পাচ্ছেন (মাথা) তার ছেলের রক্তে ঢাকা। এখন আবার সেই ফর্সা উরুর ভদ্রমহিলা তার ফর্সা হাত দিয়ে দুর্যোধনের শরীরে আলতো করে ঘষছেন। এক সময় সে তার প্রভুর জন্য এবং অন্য সময় তার ছেলের জন্য দুঃখিত হয়। এক সময় সে তার প্রভুর দিকে তাকায়, আরেকবার তার ছেলের দিকে। দেখ, হে মাধব, তার মাথায় হাত দিয়ে আঘাত করে, সে তার বীর পত্নী, কুরুদের রাজার বক্ষে পতিত হয়। পদ্মের ফিলামেন্টের মতো বর্ণের অধিকারী, তিনি এখনও পদ্মের মতো সুন্দর দেখতে পান। হতভাগ্য রাজকুমারী এখন তার ছেলের মুখ এবং এখন তার প্রভুর মুখ ঘষে।"

—  গান্ধারী , কিসারি মোহন গাঙ্গুলী দ্বারা অনুবাদিত

এখানেও দেখা যাচ্ছে নামের উল্লেখ নেই। এ হেন অবহেলার কারণ স্বয়ং কবিই ভালো বলতে পারবেন৷ কারণ তার শোকবিহ্বল ছবিও তিনি স্পষ্ট ভাবে তুলে ধরেননি। এত নির্মম মৃত্যু দুর্যোধনের তারপর ভানুমতীর জীবন কীরূপ হলো তা জানার আগ্রহ পাঠকের থেকেই যায়। কৃষ্ণদ্বৈপায়ন যুদ্ধকে ফোকাস করতে গিয়ে কাহিনীর সাধারণ আকর্ষণ, কষ্ট -দুঃখ, পাওয়া, না পাওয়ার হিসেব মেলাননি বলে আমার দাবী। যে কারণে কুন্তী, সুভদ্রা, উত্তরাদের উপস্থিতি যতটা এসেছে ঠিক ততটাও বিচরণ নেই ভানুমতীর!

1000205476.png


1000216462.png

পোস্টের ধরণজেনারেল রাইটিং
ছবিওয়ালানীলম সামন্ত
মাধ্যমমেটা এ আই
লোকেশনপুণে,মহারাষ্ট্র
ব্যবহৃত অ্যাপক্যানভা, অনুলিপি


1000216466.jpg


১০% বেনেফিশিয়ারি লাজুকখ্যাঁককে


1000192865.png


~লেখক পরিচিতি~

1000162998.jpg

আমি নীলম সামন্ত। বেশ কিছু বছর কবিতা যাপনের পর মুক্তগদ্য, মুক্তপদ্য, পত্রসাহিত্য ইত্যাদিতে মনোনিবেশ করেছি৷ বর্তমানে 'কবিতার আলো' নামক ট্যাবলয়েডের ব্লগজিন ও প্রিন্টেড উভয় জায়গাতেই সহসম্পাদনার কাজে নিজের শাখা-প্রশাখা মেলে ধরেছি। কিছু গবেষণাধর্মী প্রবন্ধেরও কাজ করছি। পশ্চিমবঙ্গের নানান লিটিল ম্যাগাজিনে লিখে কবিতা জীবন এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ ভারতবর্ষের পুনে-তে থাকি৷ যেখানে বাংলার কোন ছোঁয়াই নেই৷ তাও মনে প্রাণে বাংলাকে ধরে আনন্দেই বাঁচি৷ আমার প্রকাশিত একক কাব্যগ্রন্থ হল মোমবাতির কার্ণিশইক্যুয়াল টু অ্যাপল আর প্রকাশিতব্য গদ্য সিরিজ জোনাক সভ্যতা



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

আমার বাংলা ব্লগ পরিবারের সব্বাইকে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন৷ ভালো থাকুন বন্ধুরা। সৃষ্টিতে থাকুন।

🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾🌾


1000205458.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQHKgX7itFyjwbsWanwCxVcpznVPoq74AD9choMCjeWYrTCNC9tGGPVurQJpuwtKhZHHZy98cbp.png

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iQWqhxxsnyoVYgy5NrLetuJsNGL7qNkULJzJnsWirFd4h3YfksobeNxa5RExcnMgKbhJME1FNai.png

1000205505.png