বাংলা ভাষার বিস্মৃতপ্রায় কিছু শিশুতোষ ছড়া

IMG_20250323_164323.jpg
[ক্রিয়েটিভ কমনস লাইসেন্স, আন্ডার ফেয়ার ইউজেস পলিসি ]


ভাষা নিয়ত পরিবর্তনশীল । বাংলা ভাষাও তার ব্যতিক্রম নয় । ভাষার পরিবর্তনের সাথে সাথে তার প্রাচীন লোককথা, লোকজ বা মুখে মুখে প্রচলিত ছড়ারও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় । কিছু তো পুরোপুরি কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যায় । আর যেগুলো বেঁচে থাকে সেগুলোও পরিমার্জিত, রূপান্তরিত হয়ে অন্য ধারার সৃষ্টি করে । এর আগে আমি বাংলা ভাষার প্রাচীন ছড়ার উপরে দু'টি নিবন্ধ লিখেছিলাম "আমার বাংলা ব্লগে" । একটি ছিল হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন ছড়া নিয়ে এবং অপরটি ছিল বাংলা ভাষায় অপ্রচলিত প্রাচীন কিছু ছড়া নিয়ে ।

আজকে কোনো প্রবন্ধ বা নিবন্ধ লিখতে বসিনি । জাস্ট বিস্মৃতপ্রায় কিছু অসম্ভব মিষ্টি ছড়া নিজের স্মৃতি থেকে লিখতে বসেছি ।

এই ছড়াগুলো আমি শিশুকালে মুখস্থ করেছিলাম । বর্তমানে কোনো বইপত্রে এই ছড়াগুলোর আর উল্লেখ পাইনি । যেহেতু প্রায় ২৫ বছর আগে এগুলো মুখস্থ করেছিলাম তাই অনেক ছড়ারই কিছু কিছু অংশ ভুলে গিয়েছি, তাই সেগুলি নিজেই লিখে পূরণ করার ধৃষ্টতা দেখিয়েছি এখানে । আর হ্যাঁ , প্রায় সবগুলি ছড়ারই নাম মনে নেই , তাই নিজের মতো করে নামকরণ করেছি ।


রতনের ভাই যতনলাল


রতনের ভাই যতনলাল,
তার ছিল দুই তোবড়া গাল ।
তোবড়া গালে পান পুরে,
জোরসে দিতো গান জুড়ে ।
আজিনপুরের গাজিন খাঁ,
গান শুনে সে বললে, "হাঁ ।"
"বহুত আচ্ছা গানা হ্যায়",
বখশিশ এক সিকি দেয় ।
সেই সিকিতে যতনলাল,
পান কিনে ফের ভরলো গাল ।


খোকন বুড়ো


সাত বছরের ছেলে বুড়ো,
খোকন হলো তারই খুড়ো ।
খোকন চিবোয় পান-সুপারি,
বুড়ো চিবোয় টফি।
চু কিত্ কিত্ বুড়ো খেলে,
খোকন দাবার ছকটি পেলে
ঘোড়ার চালে মাত করে দেয়
নিয়ে গরম কফি ।


ভালো ছেলের দল


আস্ত রাঙা মুলো,
কিনে খাচ্ছে ভুলো ।
কারোর কথা শুনবে না তাই,
কানে দিয়েছে তুলো ।

ওই যে দেখো বলা,
খাচ্ছে পাকা কলা ।
আর খাচ্ছে বাবার কাছে,
দু'বেলা কান মলা ।

বোসেদের বাদল,
খাচ্ছে ভাতে ওল
কুট কুটিয়ে গলাটা তার,
ফুলে উঠেছে ঢোল ।


খ্যাঁক শেয়ালের মাসি


এক যে ছিল,
কি ছিল ভাই ?
খ্যাঁক শেয়ালের মাসি ।
আঁধার রাতে ঠন ঠনা ঠন,
বাজায় ভাঙা কাঁসি ।

শব্দ শুনে রাজা-রানী,
বললে হেঁকে, "কেরে ?"
সিপাইরা সব বাগিয়ে লাঠি,
আসলে পিছে তেড়ে ।

তারপরেতে কি হলো ভাই ?
হবে আবার কি ?
মাসিকে ধরে রাণী বানালো
খাস তালুকের ঝি ।


মৎস্য শিকারী


নদী নদী ছোট্ট নদী,
জল থৈ থৈ করে ।
ছোটকা বাবু ছাতা মাথায়,
ছিপ দিয়ে মাছ ধরে ।

ফাৎনাটা যেই নড়েছে,
টান মেরেছে সেই,
মাছ উঠেছে কিন্তু যে তার
মাথায় ছাতা নেই ।

ছোটকা বাবুর ছাতা তখন
ভাসে জলের টানে,
হারিয়ে ছাতা ছোটকা বাবু
পুঁটিই ধরে আনে ।


আন্না পিসির রান্না


আন্না পিসি রান্না ঘরে বাটনা বাটে শিলে,
ওদিকে উঠোন থেকে মাছ নিয়ে যায় চিলে ।
পিসি এলো চিল তাড়াতে শিলের নোড়া হাতে,
উনুনে ভাত চড়-চড় জল পড়ে না তাতে ।
ভাতের হাঁড়ি নামিয়ে পিসি চড়ায় মাছের কড়া,
হয়নি মাছে হলুদমাখা ধুলোয় পড়ে নোড়া ।
নোড়া ধুয়ে বাঁটতে হলুদ মাছ পুড়ে খাঁক হয়,
বিপদ যত আন্না পিসির, রান্না করা নয় ।
রান্না বড় বেয়াড়া কাজ সামলানো যে দায়,
রান্নাঘরের কোণে বসে কান্না শুধু পায় ।


------- ধন্যবাদ -------


পরিশিষ্ট


এই পোস্টটি যদি ভালো লেগে থাকে তো যে কোনো এমাউন্ট এর টিপস আনন্দের সহিত গ্রহণীয়

Account QR Code

TTXKunVJb12nkBRwPBq2PZ9787ikEQDQTx (1).png


VOTE @bangla.witness as witness

witness_proxy_vote.png

OR

SET @rme as your proxy


witness_vote.png

»»——⍟——««